মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ৩১ জানুয়ারি সোমবার ঘোষণা করা হবে। গত ১২ জানুয়ারি রায় পূর্ববর্তী মামলার সকল কার্যক্রম শেষ করে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল রায়ের জন্য এ দিন ধার্য্য করে আদেশ দিয়েছিলেন। যদি রায়ের দিন না পিছিয়ে সোমবার ৩১ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়, তাহলে ঘটনার বরাবর এক বছর ৬ মাসের মাথায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মাঝেও এ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় প্রদান করা হবে।

মামলার সাক্ষ্য, জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, ৩৪২ ধারায় আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক, উভয় পক্ষের সমাপনী বক্তব্য সহ এ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম এর আগে ৮ পর্বে ৪০ কার্যদিবসে সমাপ্ত করা হয়।

ঘটনা ও মামলা :

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মারিশবনিয়া এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

পুলিশের গুলিতে মেজর (অব:) সিনহা হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তখন ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তখন নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের গাড়ি থেকে কিছু ইয়াবা, গাঁজা ও মদ উদ্ধারের কথা বলে পুলিশ। ঘটনার পরদিনই পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘রাওয়া’ এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার হয়, গণমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় জনগণও প্রতিবাদী হয়ে উঠে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের এসপি সহ প্রায় ১৪০০ সদস্যকে অন্যত্র বদলী করা হয়।

এঘটনায় পুলিশ নিজেরা বাদী হয়ে পরদিন ১ আগস্ট টেকনাফ থানায়। ২ টি ও রামু থানায় পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

পরে নিহত মেজর (অব:) সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামী করে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ এর আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। যার টেকনাফ মডেল থানা মামলা নম্বর : ৯/২০২০ ইংরেজি।জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি এবং এসটি মামলা নম্বর -৪৯৩/২০২১ ইংরেজী। মামলাটি আমলে নেওয়ার পর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ র‍্যাব-১৫ কে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে বিজ্ঞ বিচারকের এ নির্দেশ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়।

মামলার আইও :

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী র‍্যাব-১৫ প্রথমে তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) হিসাবে সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ জামিলুল হককে নিয়োগ দেন। এএসপি জামিলুল হক ২০২০ সালের ৬ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত শুধুমাত্র ৮ দিন এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পালন করেন। মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম ২০২০ সালের ১৪ আগস্ট থেকে শেষ অবধি দায়িত্ব পালন করেছেন। মামলার আইও মোঃ খায়রুল ইসলাম বর্তমানে র‍্যাব সদর দপ্তরে গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত আছেন।

তদন্ত, চার্জশীট ও চার্জশীটের বক্তব্য :

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষী সহ আলোচিত মামলাটির চার্জসীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকান্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে, পুলিশের দায়ের করা ৩ টি মামলা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায়, বিচারের জন্য কোন উপদান না থাকায় আদালতে মামলা গুলোর ‘চুড়ান্ত রিপোর্ট’ দেওয়া হয়।

র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) বিভিন্ন ধরনের আলামত ও ডিজিটাল কন্টেন্ট আমলে এনে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের মামলায় চার্জসীট দেন। চার্জসীট থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৭ জুলাই সিনহা মো. রাশেদ খান, শিপ্রা দেবনাথ, সিফাত ও রুফতি নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করেন। ইউটিউবে একটি ভিডিও চ্যানেল নিয়ে কাজ করার সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা হয়। সাধারণ মানুষ পুলিশের মাধ্যমে তাদের জিম্মি দশা, অত্যাচারের ঘটনা মেজর সিনহাকে জানায়। এসব জানতে পেরে সিনহা পীড়িত হন।

আরো জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ ওসি প্রদীপের কথিত রাজ্য ছিল। মূলত তার স্বেচ্ছাচারিতা, আইন অমান্য করে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা এবং তার অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সিনহা ও তার সঙ্গীরা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ওসি প্রদীপ সরকারি অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করতেন এবং ইয়াবাকেন্দ্রিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

এসব বিষয়ে ওসি প্রদীপের কাছে জানতে ক্যামেরা ও ডিভাইসসহ সিনহা, শিপ্রা ও সিফাত থানায় যান। র‌্যাবের অভিযোগপত্রে বলা হয়, থানায় তাদের অনতিবিলম্বে টেকনাফ বা কক্সবাজার ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। তা না হলে ‘তোমাদের আমি ধ্বংস করে দেব’ বলে হুমকি দেন প্রদীপ। ওসি প্রদীপের হুমকি উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কারণেই ষড়যন্ত্র করে মেজর সিনহাকে হত্যা করা হয় বলে জানায় র‌্যাব।

ঘটনার দিন সকাল থেকেই সিনহার গতিবিধি নজরে রাখা হয়। একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘বৃক্ষরোপণ’ অনুষ্ঠান শেষে ওসি প্রদীপকে জানানো হয়, মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ প্রাইভেটকার নিয়ে টেকনাফের শামলাপুর পাহাড়ে গেছেন। এ সময় সোর্সের মাধ্যমে বাহারছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী সিনহার প্রতি নজর রাখতে থাকেন। শামলাপুর এপিবিএন পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশির নামে গাড়ি থেকে নামিয়ে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান-কে খুব কাছ থেকে চারটি গুলি করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী।

এর কিছুক্ষণ পরেই প্রদীপ কুমার দাশ যখন ঘটনাস্থলে যান, তখনো মেজর (অব:) সিনহা জীবিত ছিলেন। এ সময় ওসি প্রদীপ সিনহার ‘মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পায়ের জুতা দিয়ে আঘাত করে’ বিকৃত করার চেষ্টা করেন। এর পরই সিনহার মৃত্যু হয়। পরে লোক দেখানোভাবে তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

চার্জশীটের ১৫ আসামি :

বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

বিচার শুরু :

২০২১ সালের ২৩ আগস্ট কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি :

১৫ জন আসামীর মধ্যে ১২ জন আসামী ১৬৪ ধারায় আদালতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। তারা হলেন : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

যারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি :

৩ জন আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেননি, তারা হলো : টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব। আদালতে চার্জশীট জমা দেওয়ার পর ২০২১ সালের ২৪ জুন কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করে।

মামলায় যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন :

এ মামলায় যে ৬৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন-তাঁরা হলেন-মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: দেলোয়ার হোসেন শামীম ও তামান্না ফারাহ, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাত, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আমিন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও হাফেজ শহীদুল ইসলাম, আবদুল হামিদ, ফিরোজ মাহমুদ ও মোহাম্মদ শওকত আলী, হাফেজ জহিরুল ইসলাম, ডা. রনধীর দেবনাথ, সেনা সদস্য সার্জেন্ট আইয়ুব আলী, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মোঃ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী, মোক্তার আহমদ, ছেনোয়ারা বেগম, হামজালাল, আলী আকবর, ফরিদুল মোস্তফা খান, বেবী ইসলাম, সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মোঃ মুনতাসীর আরেফিন, সার্জেন্ট মোঃ মোক্তার হোসেন, কর্পোরাল নুর মোহাম্মদ, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সৈয়দ মঈন, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবু জাফর, লেন্স কর্পোরাল মোঃ রুহুল আমিন, আহমদ কবির মনু, ধলা মিয়া, সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট মোঃ জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট আনিসুর রহমান, কনস্টেবল কামরুল হাসান, রামু সেনানিবাসের ১০, এমপি ইউনিটের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ইমরান হাসান, র‍্যাব-১৫ এর এএসআই নজরুল ইসলাম, এসআই সোহেল সিকদার, পুলিশের কনস্টেবল শুভ পাল, এসআই মোঃ আমিনুল ইসলাম ও একই থানার কনস্টেবল পলাশ ভট্টাচার্য, জব্দ তালিকার সাক্ষী কনস্টেবল উসালা মার্মা, সেনা সদস্য হীরা মিয়া, র‍্যাব-১৫ এর নৌবাহিনীর সদস্য আবু সালাম, কাউন্টার ম্যানেজার নবী হোসেন, আবুল কালাম ও শহীদ উদ্দিন, সিনহাকে খুনের আগে-পরে বিভিন্ন জনের মোবাইল ফোন রেকর্ডকারী গ্রামীণ ফোনের প্রতিনিধি মোঃ আহসানুল হক, রবি অপারেটরের প্রতিনিধি সৈকত আহমদ শিপলু, রাসায়নিক পরীক্ষক মিজানুর রহমান ও পিংকু পোদ্দার, কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন, এসআই বাবুল মিয়া, এসআই রাশেদুল হাসান, এসআই হাশেম, এসআই মোহাম্মদ মুছা, এসআই আবদুল জলিল, এসআই আবদুল্লাহ আল হাসান, এএসআই মোঃ বাবুল মিয়া, এসআই নাজমুল হোসেন এবং এসআই সুমন কান্তি দে, এসআই কামাল হোসেন, পরিদর্শক মানস বড়ুয়া, কনস্টেবল মোশাররফ হোসেন ও পরিদর্শক এ.বি.এম.এস দোহা, মামলার আইও সিনিয়র এএসপি মোঃ খায়রুল ইসলাম এবং প্রথম আইও সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ জামিলুল হক।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটির আইনজীবী :

রাষ্ট্র পক্ষে আইনজীবী হিসাবে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এডভোকেট ফরিদুল আলম মামলাটি পরিচালনা করেন। তাঁকে সহায়তা করেন-অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ।

আদালতে যুক্তিতর্ক চলাকালে সিনিয়র আইনজীবী, ফৌজদারি অপরাধ বিশেষজ্ঞ সৈয়দ রেজাউর রহমান রাষ্ট্র পক্ষে আদালতে শুধুমাত্র যুক্তিতর্ক পর্বে অংশ নেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী :

আদালতে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এর আইনজীবী হিসাবে এডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট মোহাম্মদ সৈয়দুল ইসলাম, এডভোকেট মোহাম্মদ আইয়ুব, এডভোকেট এসমিকা সুলতানা, এডভোকেট শাহ আলম, এডভোকেট আবুল আলা জাহাঙ্গীর প্রমুখ দায়িত্ব পালন করেন।

আসামীদের আইনজীবী :

আসামীদের পক্ষে আদালতে এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, এডভোকেট চন্দন দাশ, এডভোকেট দিলীপ দাশ, এডভোকেট শামশুল আলম, এডভোকেট মমতাজ আহমদ (সাবেক পিপি) এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, এডভোকেট এম.এ বারী, এডভোকেট নুরুল হুদা, এডভোকেট ওসমান সরওয়ার আলম শাহীন, এডভোকেট মোশাররফ হোসেন শিমুল, এডভোকেট ইফতেখার মাহমুদ, এডভোকেট মোবারক হোসেন প্রমুখ মামলার কার্যক্রমে অংশ নেন।

উভয়পক্ষের আইনজীবীদের প্রত্যাশা :

গত ১২ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে গণমাধ্যমের কাছে বাদী পক্ষ ও রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীরা আসামীদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করতে পেরেছেন বলে দাবি করেন এবং আইন অনুযায়ী আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে বলে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপরপক্ষে, আসামীদের আইনজীবীরা মামলা দায়েরকালীন ত্রুটি সহ, মামলার বিভিন্ন অসঙ্গতি আদালতে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেন। তাঁরাও আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন।

প্রদীপ, লিয়াকত’র সর্বোচ্চ সাজা চায় সিনহার পরিবার :

সিনহার বড় বোন ও মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হোক। এমন জঘন্য হত্যাকান্ড যেন আর না ঘটে। আমার মতো আর কোনও বোনের বুক যেন খালি না হয়। অপরাধ করে কেউ যেন পার না পায়। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এটাই রায়ে প্রমাণ হোক।’

তিনি বলেন, ‘মামলার ১৫ আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে ১ ও ২ নম্বর আসামি (ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত) হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত। এই দুই জনের সর্বোচ্চ সাজা হবে, আমরা এটা প্রত্যাশা করছি। বাকি আসামিদের যার যার অপরাধ অনুযায়ী সাজা দেওয়া হোক।’

শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস আরও বলেন, ‘অবশ্যই আদালত সবকিছু বিবেচনা করে রায় দেবেন। একই সঙ্গে আমি মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড অর্থাৎ ক্রসফায়ার বন্ধ হবে বাংলাদেশে। মানুষ সুবিচার পাওয়ার আশা রাখবে। এমন দৃষ্টান্তমূলক রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। যে কেউ বিচার চাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে আদালতে আসবেন।’

সিনহার পরিবারের পাশাপাশি মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছে। তবে আসামিপক্ষ বলছে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই তারা খালাস পাবে।